দত্তক নেয়ার নিয়মাবলী


দত্তক বা পালক সন্তান নেয়ার নিয়মাবলী ও তাদের নিরাপত্তা সকল পিতামাতাই তাঁদের নিজস্ব সন্তান চান। কিন্তু নিজের সন্তান না হলে, বা সন্তান বড় হয়ে দূরে চলে গেলে সন্তানের শূন্যতা ঘিরে ধরে পিতামাতাকে। যা থেকে সেইসব পিতামাতার মুক্তি মেলে সন্তান দত্তক নিয়ে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে সন্তান দত্তক নেয়ার ব্যাপারটি এখন খুব স্বাভাবিক ও সহজ একটি বিষয়। ক্যারিয়ারের জন্য নিজ সন্তান জন্মদানের সময় নেই বলে হলিউড তারকাদের মাঝে এখন সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়টি যেন নিয়মেই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যারা সাধারন, কিন্তু সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ, মনে সন্তান লালন-পালনের প্রবল ইচ্ছা, তাঁদের দত্তক নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও দত্তক বা পালক সন্তান নেয়ার নিয়ম রয়েছে। দেখে নেয়া যাক সেসব নিয়মকানন ও দত্তক নেয়া শিশুটির নিরাপত্তার বিষয়গুলো।

পালক সন্তান গ্রহন করার কয়েকটি সাধারন নিয়মাবলী:
নি:সন্তান দম্পতি- 
নি:সন্তান দম্পতি ইচ্ছে করলে পালক সন্তানের পিতামাতা হতে পারেন। সেই দম্পতিকে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ হতে হবে। এছাড়া তাঁদের মাঝে পালক সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে লালন-পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে।
প্রবাসী- 
প্রবাসী বাংলাদেশীও পালক সন্তান গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাঁদের বসবাসরত দেশের সমাজকল্যান বিভাগে আবেদন করতে হবে এবং সেখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সেদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে জানাতে হবে।
বিবাহিত মহিলা-
বিবাহিত মহিলা, কিন্তু স্বামী মারা গেছেন এবং দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহ নেই, তবে আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে - এমন মহিলা পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।
বয়ষ্ক দম্পতি-
কোন দম্পতির নিজের সন্তান বড় হয়ে গেছে কিন্তু তাঁদের সাথে থাকে না এমন দম্পতিও পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।
অবিবাহিত মহিলা-
অবিবাহিত মহিলা যিনি বিয়ে করবেন না বলে ঠিক করেছেন, অথবা বিয়ের বয়সও নেই, কিন্তু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তিনি পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।
জন্মদানে অক্ষম-
সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির মধ্যে যিনি সন্তান জন্মদানে সক্ষম, কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদে আগ্রহী নন, কিংবা দ্বিতীয় বিবাহেও আগ্রহী নন - তিনি পালক সন্তান গ্রহন করতে পারেন।
বয়স-
পালক সন্তান নিতে আগ্রহী পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে হবে এবং আইন অনুযায়ী দম্পতির বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। তবে ৩৫-৪৫ বছর বয়সী দম্পতি বেশি গ্রহণযোগ্য।
পালক সন্তানের নিরাপত্তার জন্য করণীয় কর্তব্য:
সম্পতি-
পালক সন্তান যেহেতু আইনত কোন পালক পিতা-মাতার সম্পতির উত্তরাধিকারী হতে পারে না, সেহেতু পালক সন্তানের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু কর্তব্য পালন করা উচিত।
শিক্ষার সুযোগ দেয়া-
পালক সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ দিয়ে নিজ সন্তানের মতই যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
স্বাবলম্বী করা-
তাদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী হওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা-
স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে পালক সন্তানকে নিজ সন্তানের মতো গড়ে তুলতে হবে।
সন্তানের মতো ভালোবাসা-
নিজ সন্তানের মতো স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করতে হবে পালক সন্তানকেও।
আইনগত বৈধতা লাভের উপায়:
পালক সন্তানের পিতামাতা হওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিধানে বৈধ কোন আইন নেই। তবুও কোন পরিত্যক্ত শিশুর অভিভাবক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। এজন্য আগ্রহী অভিভাবকদের যেসব বিষয় করতে হবে, সেগুলো হলোÑ
১. অভিভাবকত্ব প্রাপ্তির জন্য নোটারি পাবলিক বা মেজিট্রেট কোর্টের শুনানির আগে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সেই শিশুটির জন্মদাতা পিতা-মাতা বা সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের কাছ থেকে ’আপত্তি নাই সূচক পত্র গ্রহন করতে হবে।
২. বৈধভাবে অভিভাবকত্ব প্রাপ্তির জন্য পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। কারন পারিবারিক সকল সমস্যার সমাধান পারিবারিক আদালতই করে থাকেন।
আদালত কর্তৃক অভিভাবকত্ব প্রাপ্তির পর দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পালক পিতামাতা সন্তানের বৈধ অভিভাবক হিসেবে গন্য হবেন।
ধর্মীয় বিধান:
ইসলামে পালক সন্তান নেয়ার কোনো বৈধ বিধান নেই। কেউ পালক সন্তান গ্রহন করলে ইসলাম সেই সন্তানকে তাঁর সন্তান হিসেবে গ্রহন করে না। অর্থাৎ সেই সন্তানের জন্মদাতা পিতাই হলেন আসল পিতা। তবে যদি কেউ কোন গরীব শিশুর দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন এবং সে শিশু যদি তাঁকে বাবা বলে সম্মোধন করে, সেটা ইসলাম - ভাল চোখেই দেখে। অন্যদিকে হিন্দু আইনের অধীনে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মাবলম্বীদের সন্তান দত্তক নেয়ার বিধান রয়েছে।
দত্তক শিশু প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানঃ
বাংলাদেশে দুহাজারেরও বেশি শিশুদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে, এর সবগুলোই সামাজ কল্যান মন্ত্রণালয় ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া পরিত্যক্ত ও অবহেলিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে বেশ কয়েকটি এনজিও প্রতিস্থানও। দেশের কম-বেশি সকল শিশু ও নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে দত্তক সন্তানের খোঁজ মেলে। আগ্রহীরা তাঁদের বাসস্থানের আশেপাশেই খোঁজ করেই এরকম পুনর্বাসন কেন্দ্র পেয়ে যাবেন। কারন এরকম পুনর্বাসন কেন্দ্র ১-৭ বছরের দুঃস্থ পরিত্যক্ত শিশুকে লালন-পালন করে থাকে, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় গর্ভবতী নারী, ধর্ষিতা বা গর্ভের সন্তানকে পিতৃপরিচয় দিতে চান না এমন গর্ভবতী নারীকে আশ্রয় দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে শিশুদের জন্য সরকারিভাবে দুটি ট্রেনিং ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে; একটি ঢাকার অদূরে গাজীপুরে, অন্যটি গোপালগঞ্জে। আর রাজধানীর মিরপুর-৭-এ বেসরকারিভাবে হিড বাংলাদেশ - সেন্টার ফর ট্রেনিং রিহ্যাবিলিটেশন অব ডেস্টিটিউট উইমেন নামের একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে।
সুত্র- See more at: http://www.priyo.com/tawfiq-alahi/2013/05/01/17093.html#sthash.RPmsbDiL.dpuf
Share on Google Plus

About Advocate REAGAN

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment